মানব শুক্রাণু কি গত তিন শতাব্দীরও বেশি সময় ভুল ভঙ্গিতে চলাচল করছে?

তিন শতাব্দীরও বেশি সময় আমরা জানি শুক্রাণু প্রতিসম গতিতে সাপের মতো সাঁতার কাটে। তবে ২০২০ সালের নতুন গবেষণায় দেখা যায় সবই ভুল, এব্যাপারটাতে জোর দিতে শিরোনামটি একটু বাঁকিয়ে লিখেছি।

মানব শুক্রাণু ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণকারী প্রথম ব্যক্তি হলেন অণুজীববিজ্ঞানের জনক ডাচ বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ভ্যান লিউউয়েনহোক । মাইক্রোস্কোপের এই অগ্রণী ১৭৭৭ সালে তাঁর একটি উন্নত সংস্করণের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে নিজের বীর্য পর্যবেক্ষণ করে প্রথমবারের মতো দেখিয়েছিলেন যে তরল বীর্য বহু ক্ষুদ্র, সক্রিয় কোষে পূর্ণ। তাঁর দ্বিমাত্রিক মাইক্রোস্কোপের নীচে, এটা স্পষ্ট ছিল যে শুক্রাণু লেজ দ্বারা সন্মুখে চালিত হচ্ছে, যা শুক্রাণুর মাথা ঘোরার সাথে সাথে একপাশ থেকে অন্যপাশে সাপের মতো স্পন্দিত হতে দেখাচ্ছিল। আর মানুষের শুক্রাণু স্থানান্তরিত হওয়ার এ জ্ঞানই রয়েছে পরবর্তী ৩৪৩ বছর ধরে।

কিন্তু সম্প্রতি ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গণিতবিদ হার্মিস গাদালা ও তাঁর দল উচ্চ-গতির ত্রিমাত্রিক মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে দেখিয়েছেন বীর্যে শুক্রাণু চারপাশের তরল পদার্থে আপাত দৃষ্টিতে ড্রিল করছে বলে মনে হচ্ছে। তাঁদের গবেষনাটি ৩১ জুলাই ২০২০ তারিখে সায়েন্স অ্যাডভান্সস জার্নালে প্রকাশিত হয় ।

ত্রিমাত্রিক মাইক্রোস্কোপির পাশাপাশি তাঁরা উচ্চ-গতির ক্যামেরা – যা প্রতি সেকেন্ডে ৫৫,০০০ ফ্রেম ক্যাপচার করতে পারে – ব্যবহার করে মানব শুক্রাণু সাঁতার রেকর্ড করেন। আর তাঁদের ফলাফল পুরোপুরি আশ্চর্যজনক ছিল, কারণ এটি আমাদের ৩০০ বছরের বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসকে বদলে দিচ্ছে । 

উপরের ভিডিওটিতে দেখুন শুক্রাণু কিভাবে চারপাশের তরল পদার্থে আপাত দৃষ্টিতে ড্রিল করছে বলে মনে হচ্ছে।

নতুন এ গবেষণা দেখাচ্ছে যে, শুক্রাণুর লেজ আসলে দোলাচালে সাপের মতো একপাশ থেকে অন্যপাশে না চলে একপাশে ঝাঁকুনি দেয়। এই অসম্পূর্ণ লেজ নড়াচড়া থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য, শুক্রাণুর মাথাটি একই সময়ে বিশ্রামহীন গতিতে ঘোরে । শুক্রাণুর লেজ ও মাথার এ দুটি ক্রিয়া পৃথক দুটি কোষীয় প্রক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর লেজ ও মাথার এ দুটি ক্রিয়ার সম্মিলনে শুক্রাণু এগিয়ে যায় সামনে একটি ঘূর্ণনশীল ড্রিল বিটের মতো।

তবে মনে রাখতে হবে এই গবেষণায় শুধুই তরল বীর্যে শুক্রাণুর চলাচল দেখা হয়েছে বাস্তবে শুক্রাণুকে নারী দেহে যোনি পথ ও তাদের জরায়ুর খুব স্টিকি তরল সংকীর্ণ চ্যানেলে অনেক জটিল পরিবেশে সাঁতার কাটতে হবে, তার উপর ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলিতে উঁচানিচা দেয়ালের পেশী সংকোচন ও ধাক্কা সহ্য করতে হবে, তার পরেই পাবে ডিম্বাণুর দেখা, আর হয়তো সক্ষম হবে এটির ভিতরে প্রবেশ করতে । ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছানোর জন্য শুক্রাণুর এই ঘূর্ণনশীল ড্রিল বিটের ভঙ্গির গতি হয়তো এই শ্রমসাধ্য যাত্রা মোকাবেলায় সহায়ক ।

বর্তমানে শুক্রাণুর গতিশীলতা বা চলাচল করার ক্ষমতা ব্যবহার করে পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়, তবে নতুন এই ফলাফল প্রজনন ক্ষমতা মূল্যায়নে কি কাজে লাগবে তা জানতে আরও গবেষণা দরকার।

লেখকঃ মোহ বাঙ্গালি [আপনি যদি এই সম্পর্কে আরো পড়তে চান এখানে একটা অবলম্বিত তথ্যসূত্র]

About সময় চাকা

আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশী। সময়ের চাকায় আমরা চলেছি সুখের সন্ধানে, সেই প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে আজও চলছে সন্ধান আর অনুসন্ধান । তাই চলুন সময়ের চাকায় পিষ্ট না হয়ে, সময় চাকা ধরে চলতে থাকি, সময়কে সুন্দর করে রাখার আশায়…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *