এই যে আপনি ব্লগটি পড়ছেন এই কর্মটি সম্পাদনের পেছনে রয়েছে ১) প্রেরণা, ২) সামর্থ্য এবং ৩) উদ্দীপকের সন্নিবেশ। আসুন ব্যাপারটা কি একটু ব্যাখ্যা করে দেখিঃ এখানে আমার এই ব্লগের শিরোনাম টি হয়তো উদ্দীপকের কাজ করেছে, আর আপনার এ ব্যাপারে জানার আগ্রহ প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে আর আপনি সামর্থের কারণে পূর্ণাঙ্গ লেখাটি পড়তে পারছেন।
এই যে তিনটি নিয়ামক এখানে দেখলাম তার সন্নিবেশন যেকোনো কর্মসম্পাদনের জন্যই আমাদের দরকার। মনে রাখতে হবে যখনই কোন কাজ সম্পন্ন হয় সেখানে এই তিনটি নিয়ামক উপস্থিত ছিল। যদি কোন একটি অনুপস্থিতি থাকতো তাহলে কাজটি সম্পন্ন হতো না।
চলুন দেখি আরেকটি উদাহরণঃ মনে করার চেষ্টা করুন সম্প্রতি কখন আপনি আপনার মোবাইল ফোনের রিং শোনার পরেও কলটি ধরেননি অর্থাৎ কর্মটি সম্পাদিত হয় নি। আপনি কি চিন্তা করতে পারেন এক্ষেত্রে উদ্দীপনা ও সামর্থের সন্নিবেশন হয়নি কেন? যদি একটু বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখবেন যে মোবাইলের রিং উদ্দীপক হিসেবে ছিল, মোবাইলটিও আপনার হাতের কাছে ছিল, তার মানে সামর্থ্যও ছিল কিন্তু হয়তোবা আপনি ওই নাম্বারটি বা ব্যক্তিটির নাম দেখে তার সাথে কথা বলার জন্য খুব বেশি প্রেরনা পাননি । সুতরাং আমরা দেখছি যে শুধুমাত্র প্রেরনার অভাবে কাজটি সম্পন্ন হয়নি।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বি যে ফগ কর্ম সম্পাদনের এই নিয়মগুলোকে একটি সূত্রে আবদ্ধ করেছেন, যা ফগস বিহেভিয়ার মডেল বলে পরিচিত। তিনি দেখিয়েছেন কর্ম সম্পাদনের জন্য উদ্দীপক, প্রেরণা ও সামর্থ্য তিনটিই দরকার হয়। অর্থাৎ –
কর্মসম্পাদন = প্রেরণা + সামর্থ্য + উদ্দীপক

আমরা যদি উপরের গ্রাফটি দেখি তাহলে দেখতে পাই যে প্রেরণা এবং সামর্থ্য দুটির উপর কর্মসম্পাদন অনেকটাই নির্ভর করে তবে অবশ্যই উদ্দীপকের উপস্থিত থাকতে হবে।
দেখুন এখানে সামর্থ্য বাড়ছে এক্স অক্ষ বরাবর আর প্রেরণা বাড়ছে ওয়াই অক্ষ বরাবর, অন্যদিকে উদ্দীপকের উপস্থিতি দরকার সার্বক্ষণিক – তবে তা হতে হবে সঠিক রকমের উদ্দীপক ।
আর কাজ সম্পাদনের বিষয়টিকে এক্স এবং ওয়াই অক্ষ সাপেক্ষে যদি দেখি তবে আমরা দেখেছি এই গ্রাফের ডান দিকের জায়গা হলো কর্মসম্পাদনের জায়গা। আর যখন প্রেরণা এবং সামর্থ্য প্রয়োজনের তুলনায় কম হবে তখন আমরা গ্রাফের বাম দিকে থাকবো অর্থাৎ কর্ম অসম্পাদিত থাকবেঃ দুটি অবস্থা তারকা দিয়ে দেখানো হয়েছে উপরের গ্রাফে।
ধরুন কোন একটা কর্ম সম্পাদনের জন্য আপনার অনেক প্রেরণা আছে তাহলে কাজটি যদি আপনার সামর্থ্যের জন্য কঠিনও হয় তবু আপনি সঠিক উদ্দীপনার উপস্থিতিতে কাজটি করে ফেলতে পারবেন। আর উল্টাটাও সত্য অর্থাৎ সহজ কাজ অল্প প্রেরনার উপস্থিতিতেও করে ফেলতে পারবেন।
কোন কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে আমরা যদি এই তিনটি নিয়ামক হিসাবে রাখি তাহলে হয়তো নিজেকে বেশি অনুপ্রাণিত করে কিংবা কাজ করার সামর্থ্য বাড়িয়ে আশানুরূপ ফল পেতে পারি ।
১) প্রেরণা
আমাদের প্রেরণার পরিমাণ উঠানামা করেঃ কখনও বেশি থাকে, তবে বেশিরভাগ সময়ই মাঝারি থেকে নিচের দিকেই থাকে। কঠিন কাজ গুলা আপনার প্রেরনা যখন বেশি থাকে তখন করে ফেলতে পারলেই ভালো। আমাদের প্রেরণা মূলত সুখ ও দুঃখের অনুভব; ভালো কিছু হওয়ার আশা ও খারাপ কিছু হওয়ার ভয়; এবং সামাজিক স্বীকৃতি বা প্রত্যাখ্যান উপরে নির্ভর করে। কখনো কখনো প্রেরণার এসব উৎসের কথা চিন্তা করে তা বাড়ানো যেতে পারে।
২) সামর্থ্য
কোন কাজ সম্পাদনের জন্য অবশ্যই সামর্থ্য থাকতে হবে। আমরা তিনপথে সামর্থ্য বাড়াতে পারি যেমন ট্রেনিং এর মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে, যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, এবং অল্প অল্প পরিমানে কাজ করে (কিন্তু এক্ষেত্রে এটাকে মরণ পণ হিসেবে না নিয়ে হালকা ভাবে নিতে হবে, পরে আরেকটি ব্লগেএব্যাপারে কথা বলব)। আমাদের সামর্থ্য নির্ভর করে সময়, অর্থ-সম্পদ, শারীরিক ও মানসিক প্রচেষ্টা, এবং রুটিন এর উপর।
৩) উদ্দীপক
কর্ম সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট উদ্দীপকের দরকার আছে, যেমন ধরুন কাজের লিস্ট করা এক ধরনের উদ্দীপক । সময়সীমা, অনুরোধ, প্রতিজ্ঞা, প্রস্তাব, কর্মপরিকল্পনা এইসবও উদ্দীপকের উদাহরন। উদ্দীপক বাহ্যিক (যেমন ফোনের রিং) হতে পারে আবার আবেগ (যেমন ভঁয়) এক ধরনের ভেতরগত উদ্দীপক।
মনে রাখতে হবে স্বীকার করি বা না করি মানুষ একটা জৈবিক অ্যালগরিদম যাকে ম্যানিপুলেট করা যায়। আর এই কথা মেনে নিয়ে হয়তো উপরের ৩টি নিয়ামক হিসাবের মধ্যে নিলে আমরা ছোট, বড়, ব্যক্তিগত, ঘরের কিংবা বাহিরের কর্ম সহজেই সম্পাদন করতে পারব। শুধু নিজেকে জিজ্ঞাস করতে হবে কোন নিয়ামকটির অভাবে নির্দিষ্ট কর্মটি সম্পাদিত হচ্ছে না এবং সেটাকে হিসাবের মধ্যে নিয়ে সময়মত আবার চেষ্টা করতে হবে।
ফিচার ফটোঃ pixabay.com
লেখকঃ মোহ বাঙ্গালি