কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি এবং কেন দরকার ?

মানব জাতির এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কি? নিঃসন্দেহে বলবেন কম্পিউটার ও ইন্টারনেট | এগুলো ছাড়া বর্তমান দুনিয়া অচিন্তনীয় | স্বাভাবিক চিন্তায় আমরা যদিও কম্পিউটার বললে ডেস্কটপের কথাই মাথায় আসে | কিন্তু কম্পিউটারের ব্যবহারের খুব সামান্য অংশই আমরা দেখতে পাই কেননা বিদ্যুৎ কিংবা ঔষধ উৎপাদনসহ যেকোনো কলকারখানা চালানো এছাড়া অসম্ভব |

প্রথম দিকে কম্পিউটার ছিল বড় রুমের সমান কিন্তু গণনা ক্ষমতা ছিল মোবাইল ফোনের চেয়ে কম | সময়ের সাথে কম্পিউটারের আকার হয়েছে ছোট কিন্তু ক্ষমতা বেড়েছে অনেক গুন্ | কিন্তু আমরা এ ক্ষমতার ভৌত সীমার চরমে পৌঁছে গেছি | যেমন ধরুন বর্তমান কম্পিউটার দ্বারা রাসায়নিক বিক্রিয়া, ঔষধ উৎপাদন কিংবা বিশাল তথ্য পর্যালোচনা এবং এনক্রিপটিং (তথ্য সংকেতায়ন) বেশ মন্থর কিংবা অকার্যকর | এজন্য আমাদের শাস্ত্রীয় পদার্থবিজ্ঞানের গন্ডি পেরিয়ে যেতে হবে পারমাণু বা উপ-পরমাণু পর্যায়ে অর্থাৎ কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার দ্রুততার ‘ভুতুড়ে’ দুনিয়াতে |

বহু বছর ধরে কেবল গবেষণাগারের মধ্যে সীমিত থাকলেও আই বি এম ৮ জানুয়ারি ২০১৯ বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার (IBM-Q) যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে উম্মোচন করে .

এখনকার কম্পিউটার চলে বিটে কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার চলবে কিউবিটে। কিউবিটে ০ ও ১ সহাবস্থান করতে পারে কিন্তু  সাধারণ কম্পিউটার ‘১’ অথবা ‘0’, মানে একক অবস্থা হিসাবে থাকে (পড়ুন আমাদের ‘কম্পিউটার কীভাবে শুধু ১ এবং ০ ব্যবহার করে কাজ করে?‘ পোস্ট টি) যার কারণে কিউবিটে একসঙ্গে বহু তথ্য সংরক্ষন সম্ভব।

কিউবিটের অন্যতম গুন হলো তার ০ এবং ১ -এর সহাবস্থান | ধরুন একটি পয়সাকে উপরে তুলে ছেড়ে দিলে হয় মাথা অথবা লেজ উঠবে (সাধারণ কম্পিউটারের একক অবস্থা) । তবে আপনি যদি পয়সাটিকে স্পিন করান অর্থাৎ ঘোরান তবে মাথা এবং লেজ দুটুই অবতরণের সুযোগ রয়েছে। আপনি এটি নির্নয় না করা পর্যন্ত মাথা এবং লেজ সহাবস্থানে থাকে (কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সহাবস্থান )।

কিউবিট এন্ট্যাঙলেমেন্ট বলে অন্য একটি কাজ করে: আপনি দুটি পয়সাকে ফ্লিপ করলে, একটি পয়সা টসের ফলাফল থেকে অন্যটির ফলাফল থেকে স্বাধীন। কিন্তু কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙলেমেন্টের ক্ষেত্রে দুটি পয়সা শারীরিকভাবে পৃথক হলেও একটির যদি মাথা উঠে তবে অন্যটিরও তা হবে।

এই কিউবিটের কারণে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের শক্তি দ্বিগুণ নয়, হবে বহুগুণ । যদি আপনি একটি সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহার করে গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়টি জানতে চান, তবে এটি আসলটি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি শাখা ঘুরে দেখবে, কিন্তু একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার একবারে গোলকধাঁধার প্রতিটি পথে যেতে পারে এবং নিমিষেই গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়টি বলে দেবে ।

আমাদের ডেস্কটপ, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনে সম্ভবত কখনও কোয়ান্টাম চিপ লাগবে না। কেননা কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির লক্ষ্যটাই ভিন্ন, এগুলো ব্যবহৃত হবে জটিল ও বিশাল তথ্য পর্যালোচনার কাজে। বর্তমানে গুগল ও এই বি এম সহ অনেকেরই কোয়ান্টাম কম্পিউটার আছে তবে তাদের তথ্য পর্যালোচনা এখনো অনেক অসংগতি পূর্ণ । আমাদের হয়তো এখনো বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নির্ভরযোগ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে ।

লেখকঃ অনিরুদ্ধ তপু [আপনি যদি এই সম্পর্কে আরো পড়তে চান এখানে একটা অবলম্বিত তথ্যসূত্র]

About সময় চাকা

আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশী। সময়ের চাকায় আমরা চলেছি সুখের সন্ধানে, সেই প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে আজও চলছে সন্ধান আর অনুসন্ধান । তাই চলুন সময়ের চাকায় পিষ্ট না হয়ে, সময় চাকা ধরে চলতে থাকি, সময়কে সুন্দর করে রাখার আশায়…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *