ব্ল্যাকহোল হলো মহাশূন্যে একটি সল্প স্থানে অত্যন্ত সংকুচিত ঘন বস্তু যাকে একটি বিশাল তারকার কবর হিসাবে ধরে নিতে পারেন। এটি তৈরী হয় যখন তারকা জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে অন্তর্বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেই নিজের মধ্যে ভেঙে পড়ে। রহস্যময় ব্ল্যাকহোলের মাধ্যাকর্ষণটি এত শক্তিশালী যে এটি কাছের গ্ৰহ ও নক্ষত্রকে তার মধ্যে টানতে এবং গ্রাস করতে সক্ষম। এমনকি এ নরকের থেকে কোন আলোও নিৰ্গমন হতে পারে না এবং এটার ভিতরে স্থান ও সময়ের কোনো সত্ত্বা থাকে না যাকে বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন সিঙ্গুলারিটি বা এককত্বতা বলে অভিহিত করেছেন।
ব্ল্যাকহোল যখন আশেপাশের নাক্ষত্রিক উপাদানকে তার মধ্যে টানতে থাকে তখন সেগুলো কয়েক লক্ষ ডিগ্রি উত্তপ্ত হয়ে এক্স-রে জাতীয় আলোতে জ্বলজ্বল করতে থাকে। এক্স-রে সহ কোনও ধরণের আলো ব্ল্যাকহোলের দিগন্তের ভিতর থেকে পালাতে না পারলেও ওই দিগন্তরেখা বরাবর অত্যাধিক মহাকর্ষীয় বলের কারনে আলো বেঁকে যায়। টেলিস্কোপ দিয়ে যারা ব্ল্যাকহোল অনুসন্ধান করে তারা ব্ল্যাক হোলগুলির আশেপাশের এক্স-রে ও আলোর বেঁকে যাওয়া পর্বেক্ষন করেন।
১০ এপ্রিল ২০১৯ মানব ইতিহাসে প্রথম কোনো কৃষ্ণগহ্বরের ছবি প্রকাশিত হয়, যা পৃথিবী থেকে ৫ কোটি ৩৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ভয়ংকর ব্ল্যাক হোলটির ছবি তোলার মত অসাধ্য সাধন করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮ টি রেডিও টেলিস্কোপ এর নেটওয়ার্ক দিয়ে।

ছায়াপথের মাঝখানে থাকা ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষীয় শক্তি বিশাল হলেও পুরো গ্যালাক্সিটি তার মধ্যে টেনে গ্রাস করার জন্য যথেষ্ট নয়। আশার কথা আমাদের সূর্য কখনই একটি কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হবে না কারণ এটি বিস্ফোরণ হওয়ার মতো যথেষ্ট ভারী নয়। তবে, সুদূর কোনো এক ভবিষ্যতে একটি সাদা বামন নক্ষত্রে পরিণত হতে পারে এবং আলো দেওয়া বন্ধ করে দিবে, যার মাধ্যমে এই সৌরজগতের জীবনের আলোও নিবে যাবে।
ব্ল্যাকহোলগুলি অনুসন্ধান ও সমীক্ষণ আমাদের এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও ভবিষৎ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। এই মহাবিশ্বের আমি, আপনি, গ্রহ বা নক্ষত্র কোনো কিছুই অবিনশ্বর নয়, শুধু সময়ের ব্যাপার।
লেখকঃ অনিরুদ্ধ তপু [আপনি যদি এই সম্পর্কে আরো পড়তে চান এখানে একটা অবলম্বিত তথ্যসূত্র]
ব্লাকহোল সম্পর্কে একটা গুরুত্বপূর্ন ধারণা পাওয়া গেলো।