উচ্চ রক্তচাপ একটি স্থায়ী রোগ বলে গণ্য, এর জন্য প্রতিরোধ ও চিকিৎসা দুটোই জরুরী । তা না হলে বিভিন্ন জতিলতা ও মৃত্যুর ঝুকি থাকে।
বিশ্বব্যাপী উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। ২০১৮ সালের স্বাস্থ্য জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।
হৃৎস্পন্দন হয় হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের কারনে যাকে যথাক্রমে সিস্টোলিক এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হিসাবে মাপা হয়। এই দু’টি মাপের ভেতর সিস্টোলিক প্রেশার বড় সংখ্যায় হয়, আর যেটার সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ (সিস্টোলিক/ ডায়াস্টলিক) মিলিমিটার মার্কারি। কারও রক্তচাপ রেকর্ড যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে।
অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক লক্ষন দেখা যায় না, যার কারণে এটাকে নিরব ঘাতক বলা হয়। কিন্তু নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরিরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ও চিকিৎসাবিহিন উচ্চ রক্তচাপ থেকে মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
জটিলতা
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরিরের গুরুত্তপূর্ণ চারটি অঙ্গে (হৃৎপিণ্ড ,কিডনি, মস্তিষ্ক, চোখ ) মারাত্তক জতিলতা হতে পারে।
- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হার্টে বিভিন্ন ধরনের জতিলা হতে পারে। যেমন –হার্ট অ্যাটাক ।
- উচ্চ রক্তচাপের কারনে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে , মস্তিষ্কে স্ট্রোক হতে পারে , যা থেকে রোগীর মৃত্যু ও হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের কারন
৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোন কারন জানা যায় না, একে প্রাইমারি রক্তচাপ বলে। সাধারণত বয়স্ক মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়ে থাকে । কিছু বিষয় উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়ায় , যেমন –
- উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ধারাবাহিকতা থাকে। যদি বাবা মায়ের থাকে তবে সন্তানের হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- ধূমপায়ীদের শরিরে তামাকের নানা রকম বিষাক্ত পদার্থের কারনে উচ্চ রক্তচাপ সহ ধ্মনি, শিরার রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে ।
- খাবার লবনে সোডিয়াম থাকে ,যার ফলে রক্তের জলীয় অংশ বেরে যায় যার কারনে অতিরিক্ত লবন গ্রহন করলে রক্তচাপ উচ্চ হয় ।
- অতিরিক্ত ওজনও আরেকটি কারন
- অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় ও কলেস্তেরলযুক্ত খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে ।
- ডায়াবেটিসের কারনেও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে ।
- অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজন্ ভীতি এবং মানসিক চাপের কারনেও রক্তচাপ সাময়িক ভাবে বেড়ে যায় ।
কিছু কিছু রোগের কারনে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে । নির্দিষ্ট কারন খুঁজে পাওয়া গেলে একে বলা হয় সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ । যেমন –
- কিডনির রোগ
- ধমনির রোগ
- গর্ভধারণ অবস্থায় এক্লাম্পসিয়া ও প্রিএক্লাম্পসিয়া
- অনেকদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির ব্যাবহার ।
- স্টেরয়েড জাতীয় হরমনের ব্যাবহার ।
জীবন যাত্রার পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমান সম্ভব । উচ্চ রক্তচাপের ঝুকি কমাতে করনীয় –
- অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
- কম চর্বি ও কম কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে ।
- খাবারে অতিরিক্ত লবন পরিহার করতে হবে।
- মদ্যপান পরিহার এবং ধুমপান বর্জন করতে হবে ।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- নিয়মিত বিশ্রাম নিতে হবে, সময় মত ঘুমাতে হবে।
সাধারণত ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে, যার কারনে নিয়মিত রক্তচাপ চেক আপ করাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ সারে না, একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ।
লেখকঃ ওরিয়াস নীলা ছবি সূত্র https://pixabay.com/